ডেস্ক রিপোর্টঃ
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির সর্ব সম্মতিক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা মাস্টার জাহেদ হোসেন’কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত করা হয়।
গতকাল অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। মূলত, উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী’র প্রয়াণে সভাপতি পদ শুণ্য হওয়ায় বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার জাহেদ হোসেন’কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার জাহেদ হোসেন’র বর্ণাঢ্য জীবনীঃ
সর্বমহলে স্বীকৃত নির্লোভ, নিরহংকার, নির্মোহ, সদা হাস্যোজ্জল, আপাদমস্তক ভদ্র, নম্র, বিনয়ী একজন মানুষ হলেন মাষ্টার জাহেদ হোসন। যার জীবনের ৩২টি বছর কেঁটেছে মানুষ গড়ার কাজে।
১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর তদানীন্তন টেকনাফ থানার ৪নং সাবরাং ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁও শাহপরীর দ্বীপের উত্তর পাড়ার কৃষক পরিবারে মরহুম নজির আহমদ আর মরহুমা বিওলা খাতুনের সংসারে জন্ম নেন এই ক্ষণজন্মা শিক্ষাগুরু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক পাঠ সম্পন্ন করে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৬৪ সনে তদানীন্তন মেট্রোকোলেশন (এসএসসি) পাশ করে একই বছর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে টেকনাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন তিনি। শিক্ষকতার সাথে সাথে নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যান। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৭ সালে কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে ইন্টামেডিয়েট (আইএ) পাশ করে স্নাতকে ভর্তি হন।
১৯৭০ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ সলের ২৬ মার্চ দেশ স্বাধীনের প্রবল বাসনা নিয়ে নিজের প্রাণ বাজি রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সবারই অগোছরে। ১নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন ক্যাপ্টেন (আঃ) আব্দুস সোবহানের সার্বিক তত্বাবধানে অধিনায়ক শ্রী জয়লেন বড়ুয়ার স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মোরং পাড়া, সোনাই ছড়িস্হ ৩০৩নং ব্যাটালিয়নে পাক হানাদার ও দেশীয় রাজাকার আল্ বদর, আল্ শামসদের বিরুদ্ধে পরম সাহসিকতার সাথে দীর্ঘ ৯ মাস স্বশস্ত্র যুদ্ধ করেন। যৌবনের সোনলী দিন আর মা বাবার একমাত্র আদরের সন্তানের আদর সোহাগের মায়া মমতা ত্যাগ করে মৃত্যুর ঝুঁকি নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ শেষে বীর বেশে ফিরে আসলেও কোন দিন নিজের গর্বিত কর্মের আচরণ কারো সাথে করেননি বরং শিক্ষকতার মহান পেশায় ফিরে সাধারণ জীবন যাপন করে মানুষ গড়ার মহা কারিগরে মনোনিবেশ করেন।
১৯৭৭-১৯৯৬ পর্যন্ত টেকনাফ ও নিজ এলাকায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে অবসর নেয়ার পর হতে অদ্যাবধি সমাজ উন্নয়ন মূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। নিজ গ্রামে শাহ্পরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টার অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি।
এই বয়সেও থেমে নেই এই বীরের বীরত্ব। দেশ এবং জনগণের স্বার্থে যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেখানেই তিনি স্বশরীরে হাজির হন।কি বেড়িবাঁধ, কি রাস্তা, কি শিক্ষা সব প্রয়োজনেই তিনি সদা অগ্রভাগে থেকে বিরামহীন নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
৭৪ বছরের একজন পৌঢ় মানুষ শুধুই দেশ মাতৃকতায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে পরম সাহসিকতা আর সততার সাথে নিজেকে জনকল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন।
পাশাপাশি আওয়ামী রাজনীতির সাথেও নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী’র কমিটিতেও তিনি সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির টানা ৪ বারের সভাপতি।