বিশেষ প্রতিনিধি, রূপান্তর টিভিঃ
সীমান্ত নগরী টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার অপরাধ সম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক শাকের ডাকাতের গুলিতে ওসমান শিকদার নামে এক যুবলীগ নেতার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
আজ শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) সকাল ৬:৩০ মিনিটের দিকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে উৎপেতে থাকা সন্ত্রাসী শাকের গং যুবলীগ নেতা ওসমানকে গুলি করে হত্যা করেন বলে খবর পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়ার ডেইল পাড়া এলাকার সাবেক মেম্বার আব্দুল্লাহ (প্রকাশ কুলু) এর ছেলে শাকের ডাকাত একজন তালিকাভূক্ত অপরাধী। বন্দুক যুদ্ধে জাফর ডাকাত নিহত হওয়ার পর শাকের গ্রুপ নামে এলাকায় গড়ে তুলে নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। কচুবনিয়ার মাজেদের ছেলে সুলতান মিস্ত্রী ও কাটা বনিয়ার কাশেমের ছেলে কেফায়াত উল্লাহ তার ডান হাত ও বাম হাত হিসেবে পরিচিত। তার গ্রুপে রয়েছে এলাকার অন্তত দুই ডজন বখাটে। এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হামলা, মানব পাচার, সাগর পথে মাদকের চালান খালাসসহ অপরাধের জাল বুনে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলছে বছরের পর বছর। এসব অপরাধের দায়ে পুলিশের হাতে আটক হয়। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার ফিরে আসে সেই পুরানো পেশায়।
নয়াপাড়া কচুবনিয়া এলাকার ইউপি সদস্য জাফর জানান, গত ১০ ডিসেম্বর শাকেরের সহযোগী কাটাবনিয়ার সুলতানের ছেলে কেফায়েত কাটাবনিয়ার বাবুলের স্ত্রী পারভিনের মালিকানাধিন ইজিবাইক চুরি করে। এই সংক্রান্ত সালিশে সন্ত্রাসী শাকের এসে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উসমান সিকদারকে অতর্কিত ভাবে হামলা করে রক্তাক্ত জখম করে। মূলত ইজিবাইক চুরির ঘটনায় শাকের জড়িত আছে বলেই বিচার ভন্ডুল করতে উসমানের উপর শাকের ও তার ভাই মতলব নিজে সশস্ত্র হামলা করছে বলেও মন্তব্য করেন এই ইউপি সদস্য।
মূলত এ ঘটনার পর বিগত ২৬ ডিসেম্বর উসমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে উসমানকে অন্যায়ভাবে হামলা করার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় থানা পুলিশ তাকে এবং তার সহযোগিদের আটকের জন্য ইতোমধ্যে কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী শাকের গং ওসমানকে শেষ করে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। আবিষ্কার করে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজী ওসমান শিকদার। অবশেষে আজ ০১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ির ফেরার পথিমধ্যে উৎপেতে থাকা সন্ত্রাসী শাকের গং বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেন মুজিব রণাঙ্গনের এই সারথিকে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আয়ুব হোসেন বলেন, হাসপাতালে আনার আগে উসমান শিকদার মারা গেছেন। তাঁর বুকে, পেটে এবং পিঠে তিনটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক মুন্না বলেন, ওসমান শিকদারের হত্যাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সর্বস্তরের ছাত্রজনতাকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
সাবরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, ওসমানের হত্যাকারী সন্ত্রাসী শাকের গং দের অতি দ্রুত গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করছি।
উল্লেখ্য, আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় কথিত কিছু প্রভাবশালী মহল শাকের ডাকাত’কে হাতে রাখতেই বিভিন্নভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ফলে আরো ভয়ংকর ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী শাকের গং। তাদের অত্যাচার ও অনিয়মের হাত থেকে বাঁচতে এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী মনে করেন এবং ওসমান হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন।